খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

গুচ্ছ কবিতা - লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল







                                                     নাড়ি ছেঁড়া কুহক প্রহর

চালতা গাছের ডালে আটকে গেছে রোদ  । উঠব উঠব করেও বাতাসের সাথে হলুদ পাখিটা ডাকতেই থমকে গেল  টান টান নিজস্ব অর্জন  । কোনো বিলাপ নেই , অতঃপর চকিতে কয়েকটা পাতা ঝরে পড়তেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় কাঠবেড়ালির । আমাদের মধ্যেই তার গ্রীবাদেশে ,  জড়িয়ে থাকা চঞ্চলতা নিয়ে নিজেরাই থেকেছি মত্ত ,  পাশেই গত রাতের বিন্দু বিন্দু শিশির জমিয়ে রাখতে চায় কচুপাতা । যদিও তার নিম্নে একক ডাঙার বিলাপ  ; কোনো শষ্য নেই দুঃসহ এক আন্তরিকতা নিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে হাত । 

 
তাদের মধ্যে নীল কাদাখোঁচা খোঁজ রাখে নি শুকনো ডাল ভাঙার রাত , সেই তিমিরের পর ফিকে ছায়ায় গড়াগড়ি খায় বৈশাখের পরাগ মিলন  ; কয়েকটা হিজল ফলের সর্বনাশ  । আটকে থাকা মেঘ বৃষ্টির আশায় বিষাদ ঝরাতে থাকে আদিম প্রজাপতিটি । আমার মিলিয়ে দেওয়া কৌশিকীর সাথে লোকগীতি , কোনো নকসা বিহিন পথ নিয়ে সারাটা আবাড়  মাড়ায় , তারা চিনে শুধু চালতা তলা আর কোকিলের গানটাই । সকলেই ভালো থাকে , শুধু চুরি করে লেবু পাড়তে গিয়ে আঙুলে কাঁটা বিঁধে , রক্ত চুঁইয়ে যায় । 

শ্যামছায়া আলোর মাঝে কত সময় পেরিয়ে গেছে সে হিসেবের মধ্যে যাই না কোনো দিন । কোত্থেকে জোঁক এসে তর তর করে উঠে আসে বুকের খাদে , সে কথাও দেখতে পায় না কেউ  - কেঁচোর বুদবুদের মাঝে খননের কাদা মাখা সময় নিয়ে মূলরোম বিস্তার করে চলে বাঁচার অধিকার , তারই সুকোমল সুবাসে বিস্তারিত বৃক্ষগুলির পরম্পরা , খড়কুটো ঝরাপাতার আটপৌরে পরাণের সারমর্মটি  মাখি । নিদারুণ প্রণয়ে হয়ে যাই শেওলা মাখা উলঙ্গ কাতর । ছায়া ছায়া ডোবার কচুরি পানা বাতাস ছুঁয়ে গেলে হয়ে যাই ভীষণ কাঁপন ।  

আলো ফোটার পরে ঝুঁকে পড়ে বাঁশ পাতা  । সারারাত জেগে থাকার পর উজান নিয়ে জিয়ল মাছ -  একা পড়ে থাকা ডোবাটির ভিতর শরীর লুকায় , সেও দ্বীপ  আবিষ্কারের পথ । এ পাড়ায় কোনো দিন আসেনি ভাস্কো দা গামা। কাদা মেখে কত জন হয়ে যায় মাছরাঙা , ছোঁ মেরে উড়ে গেছে সহজ ঝোপের গভীর । সে অপেক্ষায় শুধু  চোখের ধূসর । জড়ানো লতার সুখে কয়েকটা ফড়িং উড়ে গেলে গড়িয়ে যায় বিষ পোকার সঙ্গম কাল - মেঘ আসে – নিছক বৃষ্টি নিয়ে ঢেকে দেয় সমূহ রাতের নক্সাবেলার জয় । শেষের মৃত ঘাসের ইচ্ছেরা মাটির  ক্ষত ছুঁয়ে  সমর্পণ করে  অনুচ্চার তৃষ্ণার্ত সুর  

লম্বা গাছের গা থেকে ভেসে আসে নির্জন বাতাসের গন্ধ , কোনো গোপনীয়তা নেই ,  নাভি থেকে অতৃপ্তি গড়িয়ে যায় কালো মাটির ফাটলে  -   ভুলে গেছি পারাপার । ছন্দময় অবিচ্ছন্ন ডাল পালায় বৃষ্টি হলেই বেঁচে থাকার জলে সমস্ত সংক্রান্তি । যেমন জীবন থাকে  - আদিগন্ত বিমল আকাশ। গাইবার নয় এই স্বরলিপি , সেকথা জানে এই মৌরীদ্বীপ - রোদ জলের শীর্ণতর অন্ধকার সবুজ নিয়ে  এ সময়  মৃত্যুসাধ আশ্রয় পায় নাড়ি ছেঁড়া কূহক প্রহরে - 



No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...