পাঁচটি কবিতা
আলপথ
দু’টি ক্ষেত্রকে ভিন্ন
করেছে আলপথ। এই অভিমানে
কৃষক পরিচর্যা করেনা তার।
কৃষক লাঙল দেয়,
ক্ষেত্রশরীরে দেয় জল
শ্রমের প্রবন্ধস্রোতে
জেগে ওঠে অনন্ত ফসল...
আলপথ চুপচাপ দেখে আর
দু’প্রান্তের জমিগুলিকে আঁকড়ে ধরে রাখে
অন্যমনস্ক ধান ঝরে পড়ে
গুচ্ছ গুচ্ছ তারও শরীরে
রাত্রি নিবিড় হলে সব
বিভাজন ভেঙে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে
কৃষকের গৃহে। চাষী আর
চাষীবউ সন্তানকে ‘আলপথ’ করে
যেই ঘুম অঘোরে ঘুমোয়,
সেই ঘুমের ভিতরে।
মধ্যাহ্ন-ডিঙোনো আলোয়
চাষীবউ ভাত নিয়ে আসে
অন্নপূর্ণা আলোয়
প্রতিবেশ ঝলমল করে
আলপথে বসেই অন্নগ্রহণ
করে তারা
সে মুগ্ধ হয়ে দেখে,
কৃষকের অন্তর্লীন ক্ষুধায় পরিপূর্ণ হয়েছে
বসুধা...
ভাষা
কীইবা বলার ছিলো
তোমাকে, আমার
কীইবা বলার থাকে
তোমাকে, আমার
তবুও তোমার সামনে
চুপচাপ, নির্জন
বসি
তুমি দেখো, বসে আছি,
চুপচাপ, দেখো
পুরোনো ঘরের মধ্যে
শান্ত নীরবতা,
পাক খেয়ে ঘোরে
সুদীর্ঘ অভ্যাসে এই
নীরবতার ভাষা
আমরা পড়তে শিখেছি...
প্রহরা
এ শহরে আমার কোনো পাপ
নেই
তবু এক মধ্যরাতে
অকস্মাৎ আবিষ্কার করি, আমার সন্তান
আমার শরীর থেকে
অসামান্য দূরে অবতল কুঁকড়ে শুয়ে আছে।
ভয়ে?
ঘনতমসায় দেহ ছুঁয়ে
ছুঁয়ে দেখি। শরীরের গন্ধ শুঁকি
সকালে স্নানের পর শালিখ
পাখির পথে হেঁটে হেঁটে গেছি
তারপর সারাদিন অসংখ্য
চরিত্রে অভিনয় করে
সময়ের অসুখ কিছু সংগ্রহ করেছি।
তেজষ্ক্রিয় অপমান,
অগভীর লাঞ্ছনাক্ষত,ঈর্ষার নীল বাষ্পবিষ
ঝলমলে আলোর মতো মিশে
গেছে আমার শরীরে।
স্বপ্নের মতো এই
আলোজ্বলা ঘরে, ধড়ফড় উঠে বসি, মাঝরাতে
স্নানঘরে গিয়ে সাবানের
সচেষ্ট ফেনায় নিংড়ে নিংড়ে সব
ধুয়ে ফেলতে চাই। সব।
সব...
সহস্রাব্দের ক্লেদ
জন্মান্তর পেরিয়ে ত্বকের গভীরে নেমে গেছে
সামাজিক আজ্ঞাবহ পাপ
অভিভাবকের মতো, শুধু বহন করেছি
সন্তান ঘুমায়।
শতাব্দীর মিথ্যা আকাশ
আমি দু’হাতে ধারণ করে
নিদ্রাহীন বসে থাকি শিশুর শিয়রে...
সুজাতা-বুদ্ধ সংলাপ
মেঘভাঙা বর্ষণের নীচে
একটি দু’টি করে জেগে
উঠছে অসংখ্য ধানচারা
শাশ্বত এই সংলাপটইি
পৃথিবী রোপন করছে আজীবন...
সনাতনী
উৎর্সগ: সনাতন দাস বাউল
সাধনসমাধির অম্লান
দূরত্বে, তাঁর একতারা, একা...
খানিক আগেও অস্তগামী
সূর্যর রোদ তাকে ছুঁয়েছিল। এখন কমলা এক আভা
ছড়িয়ে রয়েছে অপরূপ
তৃষ্ণার মতো, নির্জন সংগীতের স্নানে।
একটিই তার, এতদিন সহস্র
ছন্দে জ্বরা জয় করে আবহমান অসীমে বেজেছে
আজ একা। বারান্দায়।
তিনটি চড়ুই, বসে উড়ে
গেলো। তাদের কিচির মিচির মিশে গেলো
অন্যমনস্ক এই মুহূর্তের
ভিতর...
সন্ধের অল্প একটু আগে
মাধুকরী সেরে ফিরলো ফাল্গুন বাতাস
তখনই, একাকীত্বে কেঁপে
উঠলো
বেজে উঠলো সনাতন দাসের একতারা....
ভালো লাগলো।
ReplyDelete