খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

11.7.18

বিষয় স্বীকৃতি ও কণ্ঠরোধ -সুবল দত্ত






অনধীত কথাগুলি
                                   
অনুক্রম

শুরুতে বসতিহীন হাওয়া। আমার আমার বলার কেউ নেই। কেউ তখন বলার ছিলনা সূর্য যেদিকে ওঠে সেটা পূর্ব দিক। এলোপাথাড়ি দিশায় হাঁটা মন প্রাণ কথা বাত্সল্য কৌমার্য বার্ধক্য ছন্দে আসা ও মিলিয়ে যাওয়াকোনো বিকার নেই অধিকার নেই দ্বন্দ্ব নেই তারপর আবেগে মা আসতেই ক্রমশ ভাষা ও অধিকার বিনিময় এরপর থিতু হওয়াথিতু হতে হতে শব্দের তারতম্য শিখে নিলো মূর্ধা মনে জাগলো বলা না বলা সব অধিকার জিহাদ জিদ আদি মধ্য অন্ত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাই গোত্র ও বসতি চাই ভূমিজ গভীর পরিচিতি নাম উল্কি সংকেত কিন্তু এই চাওয়াই চাওয়া নয় কারো চাই সমগ্র আধিপত্য চাই অধিকারে কাটারি হনন ক্ষমতাতে রক্তচন্দনের লেপ

বঞ্চিত অধিকার

বিস্তারকালের ক্রমেই সামন্ততান্ত্রিক ভূমিব্যবস্থা আগে ছিল আদিগন্ত ভূমির অবাধ অধিকার এবার শুরু হল জমির আনুমানিক বিভাজন শুধুমাত্র কর্ম আহার ও বাসে নয়, আগ্রাসী ভূমিকা এলো ভাষাতেও যারা আঅস্তিত্ব এই আগ্রাসন মুখবুজে সয়ে গেল তাদের মুখের ভাষা সীমিত রয়ে গেল
তখন ছিল আগ্রাসনের বিস্তারকাল বাক ও ভাষা স্বাধীনতার হরণ তুমুল কিন্তু যেমন আঘাত তার তেমনি প্রত্যাঘাত এইতো প্রকৃতির রীতি তাই বাঁচার সবরকমের অধিকার স্বীকৃতি পেতে তখন জোর আন্দোলন সমবেত জেহাদ আগে আগে আগ্রাসনে ছিল হত্যা ধর্ষণ দাসত্ব বধুয়া মজদুর, পরে ধীরে ধীরে সামুহিক সাময়িক খাওয়া পরা বাসস্থানের স্বাধীনতা কিন্তু পরে বাক ও সংস্কৃতির হরণ আগ্রাসীদের অস্ত্র হলো জাতীয়তা অস্ত্র হলো গাজোরি ধর্ম অস্ত্র হলো ব্যবসায়িক সংস্থা, মিডিয়া, ট্রান্সপোর্ট এবং সামুহিক বসতির ছেদন এমনকি প্রকৃতিও তখন অধিকারীদের সপক্ষে হয়ে গেল

চেতনমন্যতা

একসময় আত্মপ্রতিষ্ঠার চেতনা কিছু মাতৃভাবনা থেকে এল দেশ বহিরাগতের কবজায়, তাই দেশমাতৃকা চেতনার প্রভাবে মাতৃভাষা প্রেম হয়ে পড়ল ক্ষীণ পরে বুঝে শুনে বহিরাগত আগ্রাসন এই সুযোগে নিজেদের ভাষা সংস্কৃতির প্রভাব বিছিয়ে দিয়ে দেশ ছাড়ল ঠিক কিন্তু কিছু প্রাদেশিক প্রত্যন্ত মাতৃভাষার কণ্ঠ রোধ করল সভ্যতা ও নিষ্ঠুরতা দুইই জাল বিস্তার হতে লাগলো ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক নষ্টামি কম্যুনিজমের নামে ধোঁকা এইসবের প্রচ্ছন্ন আড়ালে কিছু ধ্বংসকালীন আন্দোলন কিছু কুপ্রভাবশালী আন্দোলন এইসবের পর এখন ঝিমিয়ে পড়া বিপথুমান মানুষ জ্ঞানত অজ্ঞানত তার উত্তরসূরীকে চটকদার স্মার্ট মনোরঞ্জক ভাষায় তৈরি করতে লাগলো মাতৃভাষার কণ্ঠরোধ হতে লাগলো অবশ্য একসময় সারা পৃথিবী দেখল মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেতে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হতে পারে এবং মাতৃভাষা দেশকেও স্বাধীন করতে পারে ১৯৫১–৫২ সালে  পূর্ব পাকিস্থানে বাঙালি জনগণের প্রবল ভাষা সচেতনতার ফলস্বরূপ একটি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতি দাবী করা হয়।১৯৫০-এর দশকে তখনকার বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা মাতৃভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়।১৯৬১ সালে  আসামরাজ্যের বরাক উপত্যকায়, শিলচরে বাংলা ভাষার দাবীতে আন্দোলনরত ১১ জন পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

এখন সংকুচন ও হীনমন্যতা

মনোকষ্ট এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। এই যে একটি প্রদেশ।যার এখনকার মুখ্যমন্ত্রীও বাড়িতে বাংলা বলেন কিন্তু কুণ্ঠা,পূর্ণতা নেই। এখানের প্রায় বেশীরভাগ শহরে ও গ্রামে মাতৃভাষা বাংলা কিন্তু তাদের চেতনায় বাংলা নেই।বেশিরভাগ শিক্ষিত পুরুষ নারী তাদের রোজনামচায় একটি গভীর উপলব্ধি মাথায় আসতে দিতে চায় না, তারা ছিন্নমূল হয়ে যাচ্ছে ও কী ভয়ানক নিজের ক্ষতি করছে। ডুয়েল পার্সনালিটি নিয়ে কদ্দিন মানুষ থাকতে পারে। প্রবাসী বাঙালী বুঝতে পারেনা তার মাতৃভাষার শব্দ শাব্দিকের কত নিখুত কোমল স্বর্গীয় অনুভুতি থেকে সে বঞ্চিত হয়ে ব্যবসায়িক নিরেট ভাষায় বন্দী হয়ে এজন্মের মত মনুষ্যজন্মের অমৃতত্ব হারাচ্ছে। শরীরের ভিতরে অযুত অযুত ডি এন এ থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে বংশ পরম্পরা এক স্বর্গীয় মাতৃভাষা বোধ ও এক প্রবল প্রতিবাদী শক্তি। মাতৃভাষার সর্বজনীন স্বীকৃতির জন্যে।
     


2 comments:

  1. দেবাশিস দত্তJuly 11, 2018 at 9:53 PM

    অননুকরণীয় ভাষায় মননশীলতার সুচারু উন্মোচন! সুন্দর লেখা।

    ReplyDelete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...