খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

ব্যক্তিগত গদ্য- কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়





                        সাজানো বাগানের পরের স্টপেজ 



১)

সরোজিনী চলে গেল অত দূর ? সিঁড়ি ছাড়া - পাখিদের মতো পাখা বিনা ?
জীবনানন্দ

যেদিন চন্দনের কে এক দূরসম্পর্কের বউদি কাবেরী বলাকাকে নিউ মার্কেটের এ দোকান সে দোকান ঘুরিয়ে বিয়ের বেনারসী কেনালো ,সেদিনই ঠিক করলাম ,যথেষ্ট হয়েছে আর না । আমাদের ডিভোর্স মিউচুয়ালি হয়েছে ,সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজের হাতে বলাকাকে চন্দনের হাতে তুলে দিয়েছি । বলাকা এরকমই কিছু চাইছিলো । বলাকা তাদের সম্পর্কের সামাজিক বৈধতা প্রথম থেকেই চেয়ে আসছিলো । মাত্র দেড় বছর স্থায়ী ছিল আমাদের বিবাহোত্তর সামাজিক মেলামেশা । প্রথম দু মাস সিগারেট অনুশাসন দিয়ে তার শুরু ও চরম মুহূর্তে " তোমাকে ভালোবাসি " বলিয়ে নেওয়ায় তার পরিণতি । প্রথম চিড় আসে দু মাসের মাথায় , আমার চাকরি যায় ও তার ন মাস সতেরো দিন বাদে সঙ্গমেচ্ছু আমাকে বুক ঠেলে ক্রোধান্ধ সুন্দরী বউ সেই প্রথম আমাকে বলে ,তোমার মতো অপদার্থকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছিল , চন্দনকে না বলে আমি সাচ্চা প্রেম পায়ে ঠেলেছি । সেদিনই প্রথম ও চন্দনের নামের পাশে দা বললো না ।
তবে সেদিনও সন্দেহ হয়নি । পাঠক /পাঠিকা নিশ্চয় বুঝবেন ,এক্ষেত্রে আমার জীবনের প্রথম সেই দৃশ্যকাম বর্ণনা এ খুবই জরুরী ।
আমাদেরই ফুলসজ্জার খাটে ( বলাকার বাবার কাছ থেকে পাওয়া এক মাত্র বিবাহ যৌতুক ) আমারই অগ্নিসাক্ষী করা বউ ,পরপুরুষের বুকের নিচে শুয়ে ফরফর করছে ,আর চন্দন সেই স্বৈরিণীর পাকা বেলের মতো কুচযুগ ডলতে ডলতে তাকে প্রায় উন্মাদিনী করে তুলছে । আরো দেখলাম ,চন্দন সেই দ্বিচারিনীর যোনিমুখ , যা কিনা ফুলসজ্জার রাতে অসূর্য্যস্পশ্যা ভেবে মনে মনে পুরুষসুলভ আত্মপ্রসাদ অনুভব করেছিলাম ,তা আপনার তর্জনী প্রবেশ করালো । এবং বলাকাও কামান্ধ হয়ে চন্দনের নগ্ন পিঠে ওর নেলপালিশ রঞ্জিত করলো । আমাদের এই অল্পায়ু বিবাহিত জীবনে কোনোদিন বলাকাকে এত উত্তেজিত হতে কখনো দেখিনি , নাকি সেদিকে খেয়ালই ছিল না এই কামান্ধের । চন্দন ,বলাকার সেই মহার্ঘ নিতম্বের নিচে উন্মত্ত হস্তির মতো দুই পা দিয়ে ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরেছে । সেই ঘর, সেই মুহূর্তে ,সেই পৃথিবী আর এই দুই মানুষ মানুষীর অগোচরে বলাকা /আমি /চন্দন পরস্পরে প্রবিষ্ট হলাম । পরে চন্দন পজিশন বদলেছিল কিনা আমি জানিনা । আমি সেদিন অপমানিত হতে পারিনি ,আহত হতে পারিনি ,এমনকি ওদের দুজনকে খুন করতেও । শুধু বুঝলাম চন্দন তার মূল্য উসুল করে নিল । ধীর পায়ে একতলায় নেমে এসে দেখলাম ,মহিলার মৃতদেহ অগ্রাহ্যরত । এই মহিলাটি আমার মা ছিলেন ,দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগেছিলেন , এবং একবার এই মৃত্যুপথযাত্রিণীকে একেবারে সাক্ষাৎ মৃত্যুর প্রান্ত থেকে কেবলমাত্র টাকার জোরে আরো কিছুদিন ছিনিয়ে এনেছিল আমার বন্ধু চন্দন ।
আমি সেদিন একফোঁটা কাঁদতে পারিনি । এইখানে মৃত মাংস কবিতাটি অবশ্য উল্লেখযোগ্য , যা মৃতার পাশে বসে হুবহু স্মৃতিধার্য হয় ।
ডানা ভেঙে ঘুরে-ঘুরে প'ড়ে গেলো ঘাসের উপরে ;
কে তার ভেঙেছে ডানা জানে না সে ; আকাশের ঘরে
কোনদিন - কোনদিন আর তার হবে না প্রবেশ ?
জানে না সে ; কোন এক অন্ধকার হিম নিরুদ্দেশ
ঘনায় এসেছে তার ? জানে না সে, আহা,
সে যে আর পাখি নয় - রঙ নয়- খেলা নয় - তাহা
জানে না সে, ঈর্ষা নয় - হিংসা নয়- বেদনা নিয়েছে তারে কেড়ে ।
সাধ নয় - স্বপ্ন নয় - একবার দুই দানা ঝেড়ে
বেদনারে মুছে ফেলে দিতে চায় ; রূপালি বৃষ্টির গান, রৌদের আস্বাদ
মুছে যায় তার, মুছে যায় বেদনারে মুছিবার সাধ ।
হিসেবে মতো আজই বলাকার ফুলসজ্জা , অর্থাৎ আজরাতেই প্রথম চন্দন ওকে সামাজিক মতে ঝাড়বার সুযোগ পাবে । ঝাড়া কথাটাই লিখলাম ,কেননা চন্দন মেয়েদের মাগী বা মাল ছাড়া আর কিছু মনে করে না । বাজে শিবপুরের দিকটা আমি একদমই চিনিনা । আমি আসতেই চাইনি । চন্দন বেশ স্মার্ট । বললো লোকজনতো আর বলছিনা ,একেবারে হটাৎতো ,জনাকুড়ি হবে ,একটা ছোট্ট রিসেপশন ,তুমি না এলে বুঝবো আমাদের ব্যাপারটায় স্বাভাবিক হতে পারছনা ,তারপর গলার স্বর আবৃত্তিকারের হটাৎ করে খাদের দিকে নামিয়ে , কি যে হটাৎ হয়ে গেল ,বলাকার দিকে তাকিয়েই .....
পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল । ভাড়ার বিয়েবাড়ীর গেটের মুখে কোনো বাধা না পেয়ে সোজা দোতলায় উঠে গেলাম । লোকজন নেই প্রায় । দু -একজন যারা ,তারা ক্যাটারারের । তবে যে চন্দন বলেছিলো জানা-কুড়ি হবে । প্রথমেই যে ঘর খানা নজরে এলো তাতে একটি মাঝারি মাপের ইংলিশ খাট পাতা ,তার ওপরে তোশক ,,তোশক ঢাকা সাদা শাটিনে । দুটো লাল ভেলভেটে মোড়া মাথাবলিশ , মাঝে একটি পাশবালিশ একই রঙের , আর ফুল ,মুখ্যত গোলাপেরই পাপড়ি ছড়ানো । এই খাটেই আজ চন্দন আজ শুইয়ে দেবে বলাকাকে । এভাবেই শুরু হবে বলাকার নববৈবাহিক সমাজযাত্রা । চন্দন ব্যবসা করবে আর বলাকা রাঁধবে । চন্দন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ল্যাং মেরে অর্ডার বার করবে আর বলাকা শিখবে আরো বেশি করে নগ্ন হতে । তারপর পরিশ্রান্ত
দুটি সুখী মুখ । দুটোই সামান্য হাঁ করা । বুকের দ্রুত ওঠানামা । ঘোর অন্ধকার স্বাক্ষী । দুটো অপুরুষ -অনারী দেহ । ঠিক মৃতের মতোই । সকাল হলেই ওরা আবার বেঁচে উঠবে । একজন পুরুষ হবে আর একজন নারী । একজন অন্যজনের মুখ দেখতে পাবে না আর সেই জন্যই ক্ষুব্ধ হবে ওরা । ঝগড়া হবে না ? বিরক্ত ? বিবস্ত্র নিজেকে ঢাকা দেবে । তারপর মনে পড়বে। যদিও কখনো আর ছোঁবেনা বলে ঠিক করা ছিল ,তবুও সজ্ঞানে ওরা একজন পুরুষ হয়েছিল ,আর একজন নারী ।
বলাকা কখনো আর ফিরে আসবে না । তবে কি কখনোই আসে নি বলাকা ! আমি কি বসে থাকবো ? খুঁজতে বেরোবো ? এক ঘরে না কি লক্ষ্য ঘরে ? ঘর হীন বসে থাকা ? খোঁজা ? বসে থাকা ? তার ও আগে লিখতে বসা আমার।,চন্দনকে ।
ধীরপায়ে আবারো শান্ত নেমে আসি আমি । দোতলায় তখন কাবেরী বলাকার নগ্ন বাহুসন্ধিতে বিপুল হর্ষে পাউডার ঘষে দিচ্ছে ।

 

২)

The relationship between a man and a woman is of a murderer and murdered - Dostoevsky

বলাকাকে যে আমি খুন করিনি ,তার কারণ আমার ভীরুতা । তবে প্রথম যেদিন দুপুরে ওকে করলাম সেদিন নিজেকে হত্যাকারী মনে হয়েছিল । একটা ছুরি আর পুরুষাঙ্গের মধ্যে প্রভেদ কতটুকু । দুটোই ঠান্ডা ,প্রাণহীন । দুটোরই নিজস্ব কোনো প্রাণ নেই । ঘাতককে প্রাণ প্রতিষ্টা করতে হয় । এভাবেও ভাবি যে হননই অস্ত্রের অর্গাজম । হত্যার পরে দুটোরই কোনো ভূমিকা থাকে না । তখন চালনা নিষ্ফল । তখন তারা ক্লীবতা প্রাপ্ত হয় । খারাপ লাগে বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতায় । পরদিন আবারো ভালো লাগে । ভালো লাগে পঁচিশ ছোঁব ছোঁব বলাকার বহুধর্ষিত পৃথুলা যৌবন । এই দেড় বছরের লাগাতার প্রথমে সমীর ও পরে মুখ্যতঃ আমার যৌনপ্রহার যা বলাকাকে অধুনা টি ভি সিরিয়াল অভিনেত্রী লাবনী সরকার করে দিয়েছে । ঐ রখম ফর্সা শাঁখের মতো ভাঁজ পড়া গলা ,চুলের ঢাল ,হাত ,একটু ভারী মুখ ,চুষে চুষে পুরু করে দেওয়া ঠোঁট আর সর্বোপরি ওর বত্রিশ সাইজের ( নিজের মুখে বলা ) দুর্বিনীত হয়েও আকস্মিক বিনয়ী স্তন ,আর অল্প মেদ যুক্ত ফর্সা নরম পেট , স্বাস্থ্যবান চওড়া ফর্সা পিঠটুকুই বা বাদ দি কেন । অতএব প্রতিটি মিলন ই লাস্ট রাইড টুগেদার ,আরো ইনটেন্স ,আরো বন্য , আর তাকেই বলাকা ভালোবাসার প্রকাশ ভেবে ক্রমশঃ পিছল হতে থাকে । তবু আমি বলাকাকে সমাজসম্মত ভাবে পেতে চাইনি । কিন্তু ওই ক'মাসেই বলাকা পরিণতিকামী । যাকে আমার প্রথমে ঝাড়বার সুযোগ বলে মনে হয়েছিল ,সে আর শুধুমাত্র প্রমোদসঙ্গিনী হয়ে থাকতে চাইছে না । আমি চেয়েছিলাম দায়হীন প্রেম,সমীরের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া শ্বেতীর সমস্যায় ছদ্ম কনসার্ন দেখিয়ে হোমিওপ্যাথি করাও বলেছিলাম । আজ সেই অধ্যায় শেষ । নতুন অধ্যায় শুরু । তার আগে ,এই অপরিমেয় বিড়ম্বনা বোধ । কেবলই মনে হচ্ছে কোথাও একটা আমার সাথে প্রবঞ্চনা হয়েছে । জিনের নেশাটা কেটে আসছে । আঃ জিন ,সান্যাল দা মানে কাবেরীর বর বলেছিল জিন উইথ ক্র্যাব হচ্ছে আইডিয়াল লেগ ওপেনার । সারাটা দুপুর সান্যালদার এই পৈত্রিক ভিটে বাড়িতে বসে চার জনে মিলে জিন খেয়েছি । বলাকা কি সহজে খেতে চায় । না আমার বমি হয়ে যাবে বলতে বলতে সবে আড়াই পেগ খেয়ে - আমার গাল চোয়াল কেমন কেমন করছে বলে ধপ করে সোফায় বসে টিভি অন করলো । আমরা তিনজনে বাকি বোতলটা শেষ করলাম । তারপর সান্যালদা গেল রাতের জন্য হুইস্কি জোগাড় করতে ,আর কাবেরী কস্টলি বেশ্যার মতো বিলোল কটাক্ষ করে বলাকাকে বললো ,কি এবার চলো ,পড়ে পড়ে মার্ খাওয়ার সময় তো এসে গেল ,বউ সাজাতে কিন্তু সময় লাগবে । সেই যে গেল কাবেরী তাও প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেল । সান্যাল দা কি ফেরার পথে কিছু ফুল ও কিনে আনবে ?
সমীরের কথা মনে পড়ছে । মেদিনীপুরে আমরা একই কলেজে পড়তাম । কৈশোরে আমরা একসঙ্গে বলাকাকে ভালোবেসেছিলাম । বলাকা তখন সমীরের কবিতা আর আবৃতির ভক্ত । তখনই বুঝেছিলাম মেয়েরা পরিণতি না বুঝেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে চায় । ছয় বছরের ভালোবাসা দেড় বছর ও টিঁকলো না ,বলাকা আমার হলো ,কিন্তু তখন যখন মেয়েদের ভালোবাসার ক্ষমতা আমি হারিয়ে ফেলেছি । টু মাচ সেক্স বিফোর ম্যারেজ স্পয়েল দা সেম । প্রথমে কাবেরী আমাকে হুক করে ,পরে বিদিশা ,আর বলাকাকে আমিই একটু একটু করে টেনে এনেছি, নাকি বলাকাই উন্মাদ পতঙ্গের মতো এসেছে আমার কাছে । মাঝখানে ভালো হয়ে যাবো বলে দু -একটা বাচ্ছা মেয়ের সাথে ছদ্ম ব্যর্থ -ভালোবাসা হয়েছিল বটে ,কিন্তু তারপর যে কে সেই । সদ্য তিরিশে বন্ধনহীন অথচ তীব্র পারিবারিক আমার বিবাহ ও সন্তান লাভ নিয়ে যে স্বপ্নকল্প ছবি ভাবা ছিল ,বলাকা তার বিপ্রতীপে ।

1 comment:

  1. এটা ব্যক্তিগত গদ্য ???!!!

    ReplyDelete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...