খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

ধারাবাহিক- দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়





  ভালোবাসাগুলো সেলিব্রিটি হয়ে...যায়নি


নেটফ্লিক্স ডিজিটাল যুগের অন্যতম জরুরি অধ্যায়। বিঞ্জ ওয়াচ করা এ যুগের অন্যতম বড় অভ্যাস। কি এই বিঞ্জ ওয়াচ? সিরিজ ধরে ধরে ওয়েব এ বলা এপিসোড নাগাড়ে খুঁজে খুঁজে দেখে চলা। আজকের ভাষায় সোয়াইপ করে চলা। খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাওয়া। সমস্ত নিজের তথ্য জানান দিতে দিতে উলঙ্গ হয়ে যাওয়া। আপনি জানেনো না আপনি প্রোগ্রামড। সারভেলেন্স-হ্যাকিং শব্দগুলো বারবার শোনা যাচ্ছে। গোটা আমেরিকা মহাদেশকে হ্যাক করে সমস্ত অন্যায় তথ্য ফাস করে দিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন। অন্যায় কারণ, নাগরিক অধিকার ভেঙে প্রশাসন অনধিকার জরিপ চালাচ্ছিল গোপন তথ্যে। কিন্তু এই প্রোগ্রামিং বলে বা না-বলে চলছে, জানা যাচ্ছে না, কখনও আমায় সে চালাচ্ছে কখনও আমি তাকে। 
আমরা কাফকার উপন্যাসে এমন মনোরোগের চিহ্ন পাই। ফুকো আধুনিকতার ব্যাখ্যায় এমন অবস্থার কথা বলেছিলেন। গোদারের ছবিও হদিস দেয় এই রোগের। আজ সমাজের ফেবরিক ধ্বসে যাওয়ার পিছনে দায়ী এই টেকনোলজিকাল প্রোগ্রেস। মনোবিদরা বলছেন, আসন্ন সময়ের সবচেয়ে বড় ব্যাধি মনোরোগ। আজ স্বীকার করেনি, আমরা সকলেই কম-বেশি সাইকো। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মায়ের মরা দেহ আটকে রাখা ছেলের খবর লিখেছি। খোদ এ শহরের ঘটনা। আমরা ঘটনার তল খুঁজে না পেয়ে পাগল ঠাওরে ঢিল ছুঁড়েছি। কারণ, সেটা করা সহজ। একটা ডিস্কানেক্টেড সুরিয়াল সমাজে সেটাই হয়। কিন্তু অন্য ছবিটা দেখাই গেল না। 
তবে, এই প্রোগ্রেসকে আমি সবটা খারাপ ভাবে দেখি না।গেম অফ থ্রোনস নামের সিরিজের কথাই ধরা যাক। যে সাবকালচারের গল্প বলা হচ্ছে, এ তো আমরাও বলতে পারতাম। আমাদের তো মহাভারতের দেশ। বা, এই যে এ-আই নিয়ে এত হইচই। ভবিষ্যৎ টেকনোলজি বলা হচ্ছে। ব্যপারটা সহজ করে বললে, এই যে আপনি ইউটিউবে গান শুনছেন, আর আপনার মুড অনুযায়ী গান চলে আসছে একের-পর-এক, এভাবেই আপনার মন বুঝে যাচ্ছে প্রযুক্তি। একজন মানুষের সাবস্টিটিউট হয়ে উঠছে এভাবেই। তা হলে, এরপর কি? 
লোকে বলছে, এরপর অন্য গ্যালাক্সি। ইতিমধ্যে, আরবে রোবট নাগরিকত্ব পেয়েছে। আমার ধারণা মানুষ ক্রমশ আবার শেকড়ের দিকে ফিরে যাবে। সে অভিযাত্রা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।মানুষ বেড়াবে, বন্ধুতা করবে। আজকের আরবান জিপসি যৌবন তারই উদাহরণ। যাদের কোনও ঘর নেই। বা, দুনিয়া জুড়েই ঘর। এ নিয়ে এগের অধ্যায় বিস্তারিত লিখেছি। 
এ সব নিয়ে একদিন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের সাথে কথা হচ্ছিল। নতুন করে সঞ্জয়দার পরিচয় আর কি দেব? অধ্যাপক, চিন্তক সঞ্জয়দা মনে করিয়ে দিলেন, আজকের ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম আসলে বুরজোয়াদের ৮ ঘণ্টা কাজের ছক ভেঙে ২৪ ঘণ্টা খাটানোর ডাকনাম। সত্যিই তো। রোবট আর মানুষের মধ্যে ফারাক কি? এ প্রশ্ন আজ কেউ করলে, উত্তর দিতে হয়, ছোঁয়া এবং বিস্ময়।সেক্স ট্যের কল্যাণে যৌনতাও কিনে নেওয়া গেছে। ছোঁয়াও অবশ্য টাচ ফোন কিনে নিয়েছে। বিস্ময় কিনতে পারেনি। ওটা বোধয় কিনতে পারবেও না।আর গন্ধ।
সঞ্জয়দার প্রসঙ্গে মনে পড়ল, সঞ্জয়দার লেখায় আমি একটা শহর পাই। যেমন পাই ওরহান পামুক বা মিলান কুন্দেরার লেখাতেও। তো, সে শহরটা ক্রমশই ভেঙে একটা নেক্রোপলিস হয়ে উঠছে। উঁচু উঁচু বাড়ি। কর্পোরেট অন্ধকার ঘুপচি। ভবানীপুর-কালীঘাট ভেঙে যাচ্ছে। আজ কোন ওয়াল্টার বেঞ্জামিন এসে ডিজিটালে আরকেড প্রোজেক্ট লিখবেন?
জানা নেই। তবে, বেনিয়ামিন সিনেমা নিয়ে অনেক সমকালীন ভাবনার কথা লিখেছিলেন। সঞ্জয়দাও। সিনেমার ১০০ বছরের মধ্যেই যদিও মৃত্যু হয়েছে। এটা নেটফ্লিক্স প্রজন্ম। একদিন এরো মৃত্যু হবে।যে মুহূর্তে এ লেখা লিখছি, তখনই ৩-৪ দিন ধরে যাদবপুরের ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে না। ঘুমোচ্ছে না। আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা তুলে দেওয়ার বিপক্ষে। ফান্স ৬৮-র ৫০ বছর পরে, আজো বিশ্বকাপ-জ্বর পেরিয়ে এ শহরে এমন ঘটছে। আপাতত, এটুকুর জন্যেই বেঁচে থাকা যায়।

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...