খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

একগুচ্ছ কবিতা অসীম মালিক






জানালা 
                      
                       

জানালাটা কথা বলে ,
খেলতে বলে ,
        উড়তে বলে ,
                ভাসতে বলে ...

ফ্রেম ও পাল্লায়-পাল্লায়
ক্ষত-বিক্ষত মহীরুহ
        শিকড়ের ব্যাকরণ শেখায় ।

শিল্পীর চোখে ,
জানালাটা অপলক তাকিয়ে থাকে ।

কারা যেন জানালায় চোখ রেখে
রোদ ,ঝড় ,বৃষ্টির
             অনুরাগ লিখে রাখে ।

জানালাটা হৃদয় দেখায় ।

আক্ষেপ নেই 


ঝরে যাবে বলেই
                  ফুলগুলি ফুটেছে ।

জোটেনি দৃষ্টিনন্দন বাগান ,
        হয়ত নিবিড় হাতের ছোঁয়াও পাবেনা ।
               সাজিও ফিরিয়ে  নিয়েছে মুখ ,
                                  আক্ষেপ নেই ।

অস্তিত্ব তুলে ধরেছে ----
               সবুজ পাতার রান্নাঘর । 


ধানখেতের কবি সম্মেলন 

                       

আসমানী আকাশের তলায় ,
মাঠের খোলামঞ্চে কৃষক আয়োজন করেছে ---
                           অভিনব কবি সম্মেলন ।

যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ,
একে একে তারা সকলেই এসেছে ।
               যারা নবান্নের অধীর প্রতীক্ষায়
                           ডাইনিংটেবিলে সাজিয়ে রাখে প্লেট ,
                                   তারা কেউ আসেনি ।

তবু আয়োজনের কোনও ত্রুটি নেই ।
প্রথমেই রোদ্দুর এসে
          মাঠের সবুজ খাতায় খুলে বসে
                             সবুজ পাণ্ডুলিপি ।

রোদ ,মাটি ,জল ,বাতাস .....
একে-একে সকলেই শুনিয়ে যায় ----
                       নিবিড় সম্পর্কের কবিতা ।

মাঠের আবহসঙ্গীতে আকৃষ্ট পোকামাকড়
        কেঁচোর কবিতা শুনেও
                          দাঁতে কাটে কবিতা ।
----কৃষকের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায়
                        আরও সবুজ হয় সৃষ্টি সম্ভার ।

ধানখেতের কবিসম্মেলন ,
            যখন ডাইনিংটেবিলে উঠে আসে
                           সান্ধ্য কবিতার আসর জমে ওঠে নন্দনে । 

চেয়ার  


চেয়ারটা ইতিহাস খুলে বসেছে ।
        চেয়ারের লিপি পাঠ করতেই
                   চেয়ারটা বুক চিরে দেখাল -----
                                মীরজাফরের হাসি ।

একে-একে চেয়ার থেকে উঠে এলেন
         হিটলার ,মীরজাফর ,অশোক .....
               হিটলারের রক্তচক্ষুতে ধূসর মরুভূমি
                      মীরজাফরের হাসিতে তাজা খুন
                            আর অশোকের চোখে-মুখে --
                                        কলিঙ্গ যুদ্ধের আক্ষেপ ।

নিরুপায় চেয়ারটা ,
দায়ভার নিতে বলল আমায় ।
আমি আসমুদ্র হিমাচল তন্ন তন্ন করে খুঁজে এলাম ---
                    নেতাজীর চেয়ার ।
অবশেষে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন ,
        আমার প্রিয় ইতিহাস শিক্ষক । 
                  স্যারের হাতে ইতিহাস বই
                               আর চিরপরিচিত কলম ।

কলমের নিবিড় টানে
          চেয়ারে এসে বসলেন সর্বপল্লী রাঁধাকৃষ্ণন ,
                    চেয়ারের চোখে-মুখে সে কি আনন্দের বিচ্ছুরণ

চেয়ারের মুখে হাসি ফুটল ,
যে হাসি ছড়িয়ে পড়ল আসমুদ্র হিমাচল । 



আমার সাইকেল 

                         

অশোকচক্রের অভিমুখে গড়িয়ে চলে
            আমার সাইকেলের চাকা ...
রাস্তার খানাখন্দ বা উঁচুনীচু
       তির্যক চোখে তাকায়
                     সাইকেল গড়িয়ে চলে ।

আবার গর্তে পড়লে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে
রাস্তার সাথে কথা বলে
              সে যেন জানতে চায় ----
                       কোনপথে প্রগতির চওড়া রোদ ।

শুধু প্রগতির লক্ষ্যে
          ও ধুলো মাখে ,কাদা ঘাঁটে
                   সমস্ত বাধাবিপত্তি নীরবে সহ্য করে
ও অশোকচক্রের ছায়ায় এসে দাঁড়াতে চায় ।

যাদের চাকার সংখা বেশি
             যারা দাঁড়াতে পারে
                    তারা ওকে পিছনে ফেলে চলে যায় ।

আমার সাইকেলের চাকা লিক হলে
প্রগতি থমকে দাঁড়ায়
           আমার বুকের দরজায় ।

ভারতের সব এক চাকা
          অশোকচক্রের দিকে অসহায় তাকায় । 

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...