খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

একগুচ্ছ কবিতা গৌরাঙ্গ শ্রীবাল





মৃগতৃষ্ণা


একঝাঁক হরিণের মধ্যে থেকে বেছে বেছে 
একটি মৃগকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক অস্ত্রধারী, 
আর সেই মৃগ 
ছুটতে ছুটতে আমার স্ত্রী-অঙ্গের গোপন রাস্তা ধরে 
আরও ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে ।

শিকারি মৃগটিকে খুঁজে না পেয়ে ঘুরতে লাগল
বন-বনান্তরে, কিন্তু আমি ঠিক 
পেয়ে গেলাম তার নাভির গন্ধ ।
অতন্দ্র প্রহর জুড়ে সারাক্ষণ তার দিকে 
চেয়ে চেয়ে দেখি, খুঁজতে খুঁজতে শিকারিও একদিন 
অন্তর্লীন হয়ে গেল আমার ভিতর ।

যেহেতু আমার মধ্যে একটি খোঁয়াড় রয়েছে 
সেখানে নাগালের মধ্যে আছে বাঘ ও গোরু,
শিকারি তখন তার শিকারের কথা ভুলে গিয়ে
আমার করুণ চোখে সুগভীরভাবে 
লক্ষ করতে লাগল সেই হরিণের তৃষ্ণা ।
        

অনন্তকালের পথে হাঁটা 


আমি আমার মতো করে কাঁদি
তোমাকে নিজের করে পাব ।
এই দিন এই কাল
যখন শুকিয়ে গেছে মরমি চোখের জল 
তখন আমার এই বুকের ভিতর এক 
চৈতালী ঘূর্ণির মতো কান্নার নয়নধারা
আমাকে সুস্নাত করে তোলে ।

তাহলে এবার ভাবি আমি সুপবিত্র হয়ে গেছি
এখন তোমার পূজা করা তো যেতেই পারে ।
আমার প্রেমের কথাগুলি এ পূজার মন্ত্র,
আমার চোখের জল পুণ্যতোয়া গঙ্গা ।

ওই দিকে চেয়ে বসে থাকি 
কখন যে ভেসে ওঠে সেই ছবি,
যে ছবিকে বুকে নিয়ে আমি তো শুধু এ জন্মে নয়
তারও পরের জন্ম এবং আরও জন্ম-
জন্মান্তর অতিক্রম করে 
অনন্তকালের মহাদিগন্ত বিস্তৃত 
ভারত ভূমির স্বচ্ছ ও সুপরিচ্ছন্ন
রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে 
কেবল হাঁটতেই থাকব।
           


সন্ধ্যার গায়ত্রী 


রূপ নেই কোনো গন্ধ নেই আর 
শুকিয়ে গেছে রস
তবু একটি জীবনই জগতের পূর্ণরূপ,
করকমলে শূন্যতা নিয়ে বজ্রাসনে বসে আছেন
ব্রহ্মগুরু । সন্ধ্যার গায়ত্রী ভেঙে 
ফুল ফুটেছে অগণিত তারার মতো 
দিন-যাপনের ক্লান্তি সরিয়ে
লৌকিক সময়ের বিপরীত জীবনজুড়ে 
আত্মার গভীর সমীক্ষণ ।
           

যমুনার জলতরঙ্গ 

বেলেমাটি দিয়ে লেপাপোঁছা
মাটির পুতুলের রূপ ধরে বাঁশের পাটাতনের উপর
আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে 
একজোড়া তরুণ-তরুণী ।

এখনো তাদের গায়ে 
ফুটে ওঠেনি রাধা-কৃষ্ণের ভাব
শরীরে নেই পোশাকের ছিটেফোঁটা 
হাতে নেই বাঁশি,
মাথায় নেই ময়ূর পাখির ঝরা পেখমের পালক ।
অথচ তাদেরকে লক্ষ করেই শুরু হতে চলেছে 
ফাল্গুনি পূর্ণিমার দোলযাত্রায় রং-খেলার প্রস্তুতি।

এরকম অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের দিকে 
একবার তাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায়
একঝাঁক কিশোরী, যাদের বুকের উপর 
নতুন স্তনের আনাগোনা 
তাদের হৃদয়ের ভিতর দিয়ে 
তরঙ্গে তরঙ্গে বয়ে যায় যমুনার জল ।

মাটির কলসিটি তার  জড়ত্ব কাটিয়ে 
অঙ্গ দোলাতে দোলাতে ভেসে যায়।
               


নতুন জীবনে 
 

নতুন জীবনে আমি 
পা রেখে তোমাকে দেখেছিলাম আলাদিনের 
আশ্চর্য প্রদীপ রূপে, যখন যেখানে হাত দিয়ে 
তোমার শরীরে বেশ ঘর্ষণ-মর্দন করি
তখন দেখি আলো ও 
উষ্ণতা আমাকে হিম ঘরের ভিতর থেকে 
বের করে আনে আর, আমি যা চাই তা 
বলিনি তবুও তুমি যত পার দিয়ে যাও
আমার অনুভবের কৌটো ভরে।

সেসব রাখার মতো 
আমার তেমন কোনো পাত্র নেই,
উদ্বৃত্ত যা-কিছু সব
উপচে পড়ে জীবনের আনাচ-কানাচ দিয়ে,
গড়িয়ে-ছড়িয়ে যায় মাটিতে । মৌমাছি আসে 
আর প্রজাপতি আসে, 
মুখের ওপর ওড়াউড়ি করে তারা 
তোমার আগুনে পুড়ে মরে :
তাদের মৃত্যুর দৃশ্যে আমার আত্মাকে দেখে আমি 
বিস্মেয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার চোখের দিকে ।
                       

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...