খুঁজুন। ক্লিক করুন। টাইপ করুন।

8.7.18

দীপক রায়-এর কবিতা







ডিভোর্সি মায়ের টেলিফোন

এইমাত্র তোমার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেলাম। আমি দুঃখিত।
তুমি বসকে জানাও। তোমার নতুন চাকরি। বাড়ি গিয়ে যা করার করো।

গত পাঁচ বছর শুধু নয় – কোনো দিনই তোমার বাবা আমার জন্য ভাবেন নি।
এসব কথা তোমার পছন্দ নয় জানি। তুমি বাড়ি যাও। 
আমার অফিসের খুব চাপ।তুমি বাড়ি যাও।    

লোভ  

‘কী স্মার্ট হিংস্রতা তোমাদের’ – শতাব্দীর প্রথমেই এ কথা জানিয়ে
 সপ্রতিভ চলে গেলেন ভাস্কর চক্রবর্তী।

দেড় দশক পার হল। ফুলে ফলে সে এখন পল্লবিত। সে এখন  
কতো লম্বা হতে পারে একবার দেখে যাও, ভাস্কর।

আকাশ আরও কালো হয়ে বৃষ্টি নামার আগে, ভাগ্য এই --   
এইটুকু বলতে পেরেছি শুধু

পূজা

ভালবেসেছিলাম রবীন্দ্রনাথকে। ক্রমাগত ভালবেসেছিলাম, পুজো করিনি তাঁকে
ভালবেসেছিলাম জীবনানন্দকে। ক্রমাগত ভালবেসেছিলাম, পুজো করিনি তাঁকে

ভালবেসেছিলাম তারপর অনেককেই । মুগ্ধ হয়েছিলাম।
আপনাকেও ভালবেসেছিলাম। গিয়েছিলাম আপনার কাছে
একদিন দু-দিন। দেখেছি পুজোর অর্ঘ্য নিয়ে আপনার চারদিক ঘিরে
অজস্র পূজারি। আপনাকে সামান্য ভালবেসেছিলাম। সে আপনার পছন্দ নয়।

মন্দিরের বাইরে থেকে ফিরে এসেছিলাম।

 
জলসত্র

খুলেছি জলসত্র। জল পান করে পুরুষ। গাছের ছায়ার নিচে
                                   তৃপ্তিটুকু রেখে চলে যায় সে ।
খুলেছি জলসত্র। জল পান করে নারী। গাছের ছায়ার নিচে
                           সন্তোষ হাওয়ায় ভাসিয়ে চলে যায় সে-ও।
  
কোনও পুরুষ জল পান করে দু-দণ্ড জিরোয়। আগুন চেয়ে নেয়।
ধূমপান করে ধুঁয়ার ভেতর বাকি পথটুকু পার হয়ে যায়।

খুলেছি জলসত্র।পুরুষ জলপান করে। কখনো আগুন চায়।

একদিন। ভর দুক্কুরবেলা। এক নারী এল।
আঁজলা ভরে জলপান করে
                           আগুন চেয়ে বসল।

তক্ষক ডাকছিল তখন। শুধু তক্ষক ডাকছিল সে সময়।
ভর দুক্কুরবেলা।  

ইঙ্গিত

ঢেউ এসে ধাক্কা দেয় – চলে যায় ঢেউ
বারবার ধাক্কা দেয় – বারবার চলে যায় সে
আবার সে ফিরে আসে, ধাক্কা দেয় আরও একবার
      রাগ নাকি অভিমানে আরও একবার নিঃশব্দে চলে যায় সে

দেওয়ালে ফাটল দেখা দিল একদিন
      নিশিরাতে ধসের সংকেত – কী হয় কী হয়

বারবার এসেছিল সে     বারবার ফিরে গিয়েছিল  


যেরকম কাঠবেড়ালি

দুপুরে যেরকম একা  কাঠবেড়ালি জামগাছের নিচে
                      মাথা উঁচু করে   মাথা নিচু করে
                   ঘাড় ফিরিয়ে একবার এদিক
                                 একবার ওদিক দেখে নেয় 
সেরকমই দেখে নিই সব

মনুষ্যেতর এই দেখা শিখে নিই ওর কাছ থেকে

 ব্রিজের ওপর দিয়ে যেরকম শতাব্দী এক্সপ্রেস ঝমঝম করে চলে যায়   
সেরকম নয় কার্সিয়াং থেকে বাঁশি বাজিয়ে টয়ট্রেন যেরকম  
          বাতাসিয়া লুপ-এর দিকে যায় – তেমনই যেতে চেয়েছিলাম হয়তো 

আজ ওঁর ভয়ের চোখ দুটি দেখি। ভিরু চাহনি আর
                      নিশ্চিন্ত বিবরের দিকে ছুটে যাওয়া দেখি
   
পশ্চিমের দিকে তাকাই। বেলা কি অনেক পড়ে এল ?  


আমার শহরঃ চুঁচুড়া  

ঔরঙ্গজেব ওলন্দাজদের হাতে তুলে দিলেন এই শহর সতেরো শতকে
ওলন্দাজ ব্রিটিশকে দিলেন উনিশ শতকে। বিংশশতকে স্বাধীন হল
আমার শহর। এক্কা গাড়ি আর কালো ধোঁয়া উড়িয়ে স্টিম ইঞ্জিনের চলে যাওয়া
আমার সেই শহর। স্বাধীনতা এর চেয়ে কতো বড় জানি না।

কোন দিক থেকে ঝড় এসেছিল বলতে পারছে না কেউ। শুধু মাস্তুল ভেঙে মুখ থুবড়ে
পড়ে আছে জাহাজ। কেউ কিছু বোঝবার আগেই ঘটে যায় সব।
      
একবিংশতকের দ্বিতীয়দশক পার হচ্ছে। জুন মাস। বৃষ্টির আকাশ।
 আমার বাড়িতে আজ কবিতা পাঠ। কোনও ভয় নেই। আকাশে মেঘ। 

 দরজার  বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কারা? ওরা ঘরে আসছে না কেন?      
 কোনও ভয় নেই । যার যা খুশি পড়। শুধু খেয়াল রেখো 
                          আকাশে মেঘ ডাকছে  বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ... 
  












No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি। উদ্যত রাজদণ্ডপাতের দ্বারা দলিত হইয়া অকস্মাৎ অপঘাতমৃত্যুর ইচ্ছাও আমার নাই। ক...